এক নজরে আইএসএসবি-র চারদিন 4 Days of ISSB at a glance (1st day)

 


প্রথম দিন


আইএসএসবি তে নির্ধারিত দিনে সকাল ৭-৩০ এর পূর্বে যোগদান করতে হয়। সকাল ৭ টার মধ্যেই যোগদান করতে ভাল হয়। সামরিক বাহিনী তে নির্ধারিত সময়ের ০১ মিনিট পরে হলেও পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না।

Issb


পোশাকঃ


প্রবেশের সময় পোশাক হবে পুরুষদের ক্ষেত্রে ফুল প্যান্ট, ফুল হাতা শার্ট ও সু, টাই থাকা উত্তম। শীতের সময় স্যুট হলে ভালো। মহিলাদের ক্ষেত্রে মার্জিত কালারের ও ডিজাইনের ফ্রি পিস। তবে অনেকে স্যুট ও পড়ে থাকে। শীতে পোশাকের সাথে মানানসই কার্ডিগান/সুয়েটার হতে পারে।


লাগেজঃ


আইএসএসবি তে প্রবেশে পর তোমার সাথে থাকা প্রবেশ পত্র, কলম, পেন্সিল, রাবার, শার্পনার একটি ছোট ব্যাগে রাখবে। বাকী জিনিসপত্র বড় লাগেঞ্জ ইলি/ ব্যাগে নিয়ে যাবে। তোমার লাগেজ ভেতরে জমা রাখবে। তোমাদের তিন সারিতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করাবে। মোট পরীক্ষার্থীদের হিসাব করা হবে। সনদপত্র চেক এবং বায়োমেট্রিক (আংগুলের ছাপ)


আইএসএসবি তে প্রবেশের পর পরই প্রবেশ পত্র চেক এবং আংগুলের ছাপ নেয়া হবে। প্রবেশপত্র সাথে না থাকলে তথ্য যাচাই করে প্রবেশ পত্র প্রদান করা হয়। ভেতরে প্রবেশের অনুমতি পেলেই তোমাকে চেস্ট নম্বর দেয়া হবে। আইএসএসবি-তে থাকাকালীন সব সময় এই নম্বরের মাধ্যমে তোমাকে চিহ্নিত করা হবে।


ব্রেকফাস্ট:


তারপর তোমাকে ব্রেক ফাস্ট করাতে ডাইনিং হলে নিয়ে যাবে। নাস্তা হিসাবে পাউরুটি-জেলি কিংবা পরোটা, কিমা-ডাল সহ থাকতে পারে। এছাড়া প্রতিদিন সিদ্ধ ডিম ও চা থাকবে। তুমি যদি বাসা হতে ব্রেক ফাস্ট করে আসো, তবে আইএসএসবি-র কর্মরত স্টাফকে বলবে। ইচ্ছা করলে চা খেতে পার। খাবার সময় অবশ্যই চামুচ, ছুরি, কাটা চামুচ ও রুমাল ব্যবহার করবে।


শর্ত পূরনঃ


নাস্তা শেষ হলে সবাইকে ডাইনিং হলের বাইরে দাঁড় করানো হয়। একজন কর্মকর্তা আসেন। তিনি জানতে চান- ইতোপূর্বে আইএসএসবি-তে কেউ এসেছে কিনা। তিন বাহিনীর যোগ্যতা (শিক্ষা)-র মান দন্ড অনুযায়ী কেউ তার নিচে থাকলে তাকে সনাক্ত করবেন। যারা যোগ্য তাদের তিনি পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার অনুমতি দিবেন। অযোগ্যরা ফেরত যাবে।


সম্ভাষণঃ


তারপর যোগ্য পরীক্ষার্থীদের টেস্টিং হলে নিয়ে যাবে। সবাই ভিন্ন ভিন্ন চেয়ারে চেস্ট নম্বর অনুযায়ী বসবে। একজন পরীক্ষক এসে আইএসএসবি-র প্রেসিডেন্টের (সভাপতি) প্রতিনিধি হিসেবে লিখিত ভাষণ দিবেন।


পরীক্ষার বর্ণনাঃ


প্রত্যেকের জন্য একটা করে ল্যাপটপ দেয়া থাকবে। প্রত্যেকে যার যার সামনের টেবিলে থাকা ল্যাপটপ ওপেন ও স্টার্ট করবে। একজন অফিসার এসে কিভাবে আই কিউ পরীক্ষা দিবে সেটি বুঝিয়ে বলবেন। তিনি জানতে চাইবেন তোমার কোন প্রশ্ন আছে কিনা।


পরীক্ষা শুরুঃ


তার বিবরণ শেষ হলে পরীক্ষার সময় শুরু হবে। তুমি ল্যাপটপের মাধ্যমে আই কিউ পরীক্ষা দিবে।


আই কিউ পরীক্ষা


আই কিউ ভারবাল পরীক্ষায় ১০০ টি আই কিউ থাকবে। সময় থাকবে ৩৫ মিনিট।


আই কিউ ভারবাল পরীক্ষা শেষ হলে আই কিউ নন ভারবাল পরীক্ষা শুরু হবে। আই কিউ নন ভারবালে ৩৮টি প্রশ্ন থাকবে। সময় দেয়া হবে ২২ মিনিট।


আই কিউ ভারবাল ও নন ভারবালে মোট ১৩৮ নম্বরের মধ্যে তুমি যদি ১১০ পাও, তবে নিশ্চিতভাবেই পরবর্তী পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ পাবে। পরীক্ষা শেষে ল্যাপটপটি শাট ডাউন করে বন্ধ করতে হবে। তারপর ডেস্ক এর ভেতরে পূর্বের ন্যায় রেখে দিবে।


পরীক্ষা শেষে সবাইকে চা-বিরতি দেয়া হবে। সেখানে সাধারণতঃ সিঙ্গারা, সমুচা ও চা দেয়া হয়। এছাড়া কখনো কখনো হট ডগ, পেটিস, বার্গার ইত্যাদি থাকতে পারে।

আই কিউ পরীক্ষার ফলাফলঃ


নাম্বার পর সবাইকে আবার দাঁড় করানো হবে। স্টাফ (কর্মরত সেনা সদস্য) কিছু চেস্ট নম্বর ধরে ডাকবেন। যাদের ডাকা হলো তারা বেরিয়ে আসবে। তাদের লাগেজ নিয়ে আইএসএসবি- গেট পর্যন্ত নিয়ে আসা হবে।


যারা আই কিউতে খারাপ করবে, তারা আই কিউ স্ক্রিন্ড আউট হবে। আই কিউ স্ক্রিন্ড আউট হলে পুনরায় আবেদন করে পরের কোর্স গুলোতে (বয়স ও অন্যান্য যোগ্যতা সাপেক্ষে) আরো ০২ বার পরীক্ষা দিতে পারবে। আই কিউ পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পরে বাকি যারা থাকবে তাদের ১০ জন করে লাইনে দাঁড় করানো হবে। ১ম ১০ জনকে একটা গ্রুপ, তারপর ১০ জনকে আরেকটা গ্রুপ এভাবে ভাগ করে দেয়া হয়। গ্রুপগুলোর নাম সাধারণতঃ বিভিন্ন রঙের যেমন- রেড, ইয়েলো, ব্র. নেভী ব্র ইত্যাদি নামে হয়ে থাকে।


পিপিডিটি পরীক্ষা


অতঃপর সবাইকে পিপিডিটি পরীক্ষার জন্য পুনরায় টেস্টিং হলে নিয়ে যাওয়া হয়। একজন অফিসার এসে সবাইকে বুঝিয়ে বলবেন। তিনি জানতে চাইবেন কারো কোন প্রশ্ন আছে কিনা। তার বিবরণ শেষ হলে পরীক্ষার সময় শুরু হবে। ছবি দেখার জন্য ৩০ সেকেন্ড সময় এবং লেখার জন্য সাধারণতঃ ৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ড বরাদ্দ থাকে।


পরীক্ষার সময় শেষ হলে খাতা জমা দিতে হবে। খাতা জমা দেয়ার পর গ্রুপভেদে আলাদা আলাদা শেড (Hut) এর নিচে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পিপিডিটি মৌখিক পরীক্ষা সমূহ অনুষ্ঠিত হয়।


ফলাফল


পিপিডিটি পরীক্ষা শেষ হলে সবাইকে টেস্টিং হলে নিয়ে আসা হয়। সেখানে পিপিডিটি পরীক্ষার ফলাফল দেয়া হয়। যারা উত্তীর্ণ হতে পারেনি, তাদের লাগেজ সহ আইএসএসবি-র বাইরে নিয়ে আসা হয়।


দুপুরের খাবার/ লাঞ্চ


যারা ভেতরে অবস্থান করে তাদের ডাইনিং হলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং দুপুরের খাবার পরিবেশন করা হয়। কখনও কখনও দুপুরের খাবারের পরেও পিপিডিটির ফলাফল ঘোষণা করা হয়। দুপুরে খাবারে সাধারণতঃ পোলাও, মাংস ও সালাদ থাকে। এছাড়া কলা/ আপেল/ কমলা খাবারের পর ডেজার্ট হিসেবে দেয়া হয়।


গ্রুপ ফটো সেশন:


আইএসএসবিতে পরীক্ষকদের কাছে পরীক্ষার্থীদের গ্রুপ ছবি থাকে। এজন্য ১ম দিন লাঞ্চের/ দুপুরের খাবার এর পর চেস্ট নম্বর পরিহিত অবস্থায় প্রত্যেক গ্রুপের আলাদা করে ছবি তোলা হয়।


সাইকোলজি পরীক্ষা (Psychology Test)


সবাইকে টেস্টিং হলে নিয়ে যাওয়া হয়। একজন অফিসার এসে বর্ণনা দেন। সাইকোলজি পরীক্ষা শুরু হল।


রচনা লিখন :


প্রথমেই রচনা লিখতে দেয়া হয়। একটি ইংরেজিতে দেড় পৃষ্ঠা, অপরটি বাংলায় আধা পৃষ্ঠা। সময় যথাক্রমে ১৫ মিনিট ও ০৫ মিনিট হয়ে থাকে। কখনও কখনও এই পরীক্ষাটি পিপিডিটি পরীক্ষার আগে হয়ে থাকে।


গল্প লিখন:


তারপর ছবি দেখে গল্প লিখতে হয়- ২টি বাংলায় এবং ২টি ইংরেজীতে। তিন মিনিট করে সময় দেয়া হয় প্রতিটা গল্পের জন্য। পুনরায় অসামাপ্ত গল্প সমাপ্ত করতে হয়- ২টি বাংলায় এবং ২টি ইংরেজীতে। তিন মিনিট করে সময় দেয়া হয় প্রতিটা গল্পের জন্য।


বাক্য রচনাঃ


প্রজেক্টরে একটি করে ইংরেজী শব্দ আসে এবং পরীক্ষার্থীকে বাক্য রচনা করতে হয়। প্রতিটা বাক্যের জন্য ১০ সেকেন্ড করে সময় বরাদ্দ থাকে। এভাবে ৮০ টা বাক্য লিখতে হয়। একটি পাতা এর এক সাইডে ৪০টি এবং অপর সাইডে ৪০ টি থাকে। পেজ উল্টানোর জন্য ১০ সেকেন্ড বরাদ্দ করা হয় এবং পরীক্ষা শুরু হওয়ার পূর্বের বক্তব্যে বলা হয় এই ১০ সেকেন্ড এ কোনো কিছু লিখা যাবে না।

বাক্য পূর্ণ করনঃ


এরপর খাতায় ২৫টা বাংলা ও ২০ টা ইংরেজী অসমাপ্ত বাক্য পূর্ণ করতে দেয়া হয়। প্রতি বিষয়ে বাক্য পুরনের জন্য ০৫ মিনিট সময় দেয়া হয়।


আত্ম-বিবরনী ও আত্ম সমালোচনাঃ


অতঃপর মাই লাইফ বা আত্ম-বিবরনী নামে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার উপরে ১৮টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। সময় দেয়া হয় ১ ঘন্টা। আত্ম সমালোচনা বা সেলফ এসেসমেন্ট নামে পরীক্ষায় পরিবার ও সমাজের অন্যরা পরীক্ষার্থীকে কেমন জানে সেটা বর্ণনা করতে হয়। সময় থাকে ৩০ মিনিট।


আত্ম-সমালোচনা বা সেলফ এসেসমেন্ট এর পরে সবার খাতা জমা নেয়া হয়। পরেরদিন সকালের পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলী প্রদান করা হয়।


চা বিরতি


সাইকোলজি পরীক্ষার মাঝে চা বিরতি দেয়া হয়। সবাইকে চা বিস্কিট/ নাস্তা/ ফল ইত্যাদি খাওয়ানো হয়।


রাতের খাবার


সবাইকে ডাইনিং হলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ডিনার করানো হয়। ডিনারে সাধারণতঃ সাদা ভাত মাংস, ভাজি, ডাল এবং সেমাই/ পায়েস/দুধ ইত্যাদি প্রদান করা হয়।


রুম বরাদ্দ


এরপর সবাইকে চিত্ত বিনোদন কক্ষ বা রিক্রিয়েশন রুমে বসানো হয়। সেখানে সকলের থাকার জন্য রুম বরাদ্দ দেয়া হয়। এক রুমে সাধারণতঃ ০৮/১০ জন করে থাকতে হয়। প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন বেড দেয়া হয়। সেখানে তোশক, বিছানা, চাদর, কম্বল ও মশারী দেয়া থাকে।


বিশ্রাম


সবাইকে যার যার জন্য বরাদ্দকৃত রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর সবাই পোশাক পরিবর্তন করে স্লিপিং ড্রেস পরে। কেউ গোসল করতে চাইলে করতে পারে। নামাজের জন্য নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে। সকালের পরীক্ষার পোশাক সমূহ প্রস্তুত করে ঘুমাতে যাবে। আইএসএসবি তে মশার উপদ্রব রয়েছে। মশারী ব্যবহার করবে। মশারী লাগিয়ে তোমার বাসা হতে নিয়ে যাওয়া চাদর কিংবা সরকারী কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমাতে হবে।


এভাবেই ১ম দিনটি শেষ হয়।

Next day


Comments